‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা। আজ পহেলা বৈশাখ, বাঙালিদের দিন। বিগত বছরের মলিনতা মুছে দিয়ে নতুন আলোয় স্নাত বাঙালি জাতি আজ প্রবেশ করছে নতুন বর্ষে। আজ ১৪৩২ বাংলা সালের প্রথম দিন। ১৪৩১ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ সোমবার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখের ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত হলো নতুন বছর। জীর্ণ-পুরাতনকে পেছনে ফেলে বুকভরা প্রত্যাশা নিয়ে নতুন উদ্যম ও সম্ভাবনার নতুন বছরে পা রাখলো বাঙালি জাতি। সব গ্লানি ঝেড়ে ভালো কিছুর প্রত্যাশায় নতুন বছরকে বরণ করে নেবে সবাই।
নতুন বছর মানেই রঙিন হয়ে ওঠার হাতছানি, নতুন আশায় পথচলা। তাই পহেলা বৈশাখে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আয়োজনে মেতে ওঠে সারা দেশ। এবারও বর্ণিল উৎসবে মাতামাতি হবে। দেশজুড়ে উৎসব আমেজে মুখর হবে চারদিক। পথেঘাটে, মাঠে-মেলায় উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে বিভিন্ন আয়োজনে দেখা যাবে সব বয়সীদের প্রাণচাঞ্চল্য। নব আনন্দে জাগবে গোটা জাতি।
পহেলা বৈশাখ প্রথমে চালু হয় মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে (১৫৫৬-১৬০৯)। তখন কৃষি উৎপাদনের ওপরেই নির্ভরশীল ছিল অর্থনীতি। বাংলায় কৃষি অর্থনীতি আবর্তিত হতো ছয় মাসের ভিত্তিতে। মুঘল শাসনামলে কৃষকদের খাজনা দিতে হতো হিজরি দিনপঞ্জি অনুযায়ী। কিন্তু ফসল উৎপাদনের সময়ের সঙ্গে তা ছিল অসঙ্গতিপূর্ণ। কারণ, খাজনা আদায়ের সময় প্রজাদের থাকতে হতো ফসলের অপেক্ষায়। এ কারণে খাজনা পরিশোধ করতে সমস্যার সম্মুখীন হতো দুই পক্ষই। এর সমাধান খুঁজতে নিজের রাজসভার পণ্ডিতদের দায়িত্ব দেন সম্রাট আকবর। এর প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন ফতেউল্লাহ সিরাজী।
এরপর কৃষি অর্থনীতির ছয় মাসের আবর্তনকে মাথায় রেখে তৈরি হয় নতুন দিনপঞ্জি। তখন চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে ও পহেলা বৈশাখের আগে প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায়ের উৎসবের কথা উত্থাপন করেন আকবরের রাজসভার কয়েকজন পণ্ডিত। সেই থেকে এই উদ্যোগ খাজনা আদায়ের উৎসব হিসেবে উদযাপন হয়ে আসছিল। ওই উৎসবে চৈত্র মাসের শেষ দিন ছিল খাজনা পরিশোধের মাধ্যমে বর্ষবিদায় ও পহেলা বৈশাখ ছিল ঘরে নতুন ফসল তোলার মাধ্যমে বর্ষবরণ।
পূর্ব পাকিস্তানে দিনটি উদযাপন করা হতো বাঙালি সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে জাতীয় উৎসব হিসেবে বাংলাদেশে উদযাপন হচ্ছে চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ তথা বাংলা নববর্ষ। বাংলা একাডেমি ১৪ এপ্রিলকে পহেলা বৈশাখ হিসেবে ক্যালেন্ডারে স্থায়ীভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছে। এদিন তাই বৈশাখ মাসের প্রথম দিন হিসেবে গণনা করা হয়।